বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতার পদ স্থগিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতার পদ স্থগিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝিনাইদহ জেলা শাখার সদস্য সচিব সাইদুর রহমান ও মুখপাত্র এলমা খাতুনের ‘মদের বোতল’ হাতে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের পর তাদের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বুধবার (২৬ মার্চ) বিকেলে পদ স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝিনাইদহ শাখার সদস্যসচিব ও মুখপাত্রের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এর পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ‘ব্যাগ হাতে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র এলমা খাতুন একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটি রেখে খাটের ওপর বসেন।

    ওই খাটে শুয়ে ছিলেন জেলার সদস্য সচিব সাইদুর রহমান। পরে মদের বোতল হাতে নেন এলমা খাতুন।’

    সদস্যসচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র থেকে একজন প্রতিনিধি আমাদের ডেকেছিলেন। তখন আমরা ঢাকা গিয়েছিলাম। আপুর হাতে কিসের বোতল ছিল সেটা তখন আমি বুঝতে পারিনি। কেউ শত্রুতাবশত এ কাজটি করেছে।’

    জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু হুরাইরা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরালের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘ওই কক্ষে আরও অনেকে ছিল। তাদের মধ্যেই কেউ একজন ভিডিওটি করেছে এবং ছড়িয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

    বিষয়টি নিয়ে জেলা সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতি অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘ভিডিওটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটি খুবই দুঃখজনক। তাদের কাছ থেকে এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। তবে কেন, কি কারণে, কারা এ ভিডিওটি করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল সেটিও খুঁজে বের করা জরুরি।’

    উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর ঝিনাইদহ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১০৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু হুরাইরাকে আহ্বায়ক ও কেসি কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমানকে সদস্য সচিব ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও সাজেদুর রহমানকে মুখ্য সংগঠক এবং ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী এলমা খাতুনকে মুখপাত্র করা হয়।

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এই কমিটির অনুমোদন করেন। ছয় মাসের জন্য এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

    এনসিপির ইফতারে আ.লীগ নেতা


    জয়পুরহাটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচনা সভা ও ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী রাব্বীউল হাসান মোনেম। অনুষ্ঠানে এনসিপিকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

    গত সোমবার (২৪ মার্চ) শহরের স্বপ্নছায়া কমিউনিটি সেন্টারে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনীতিবিদ, শহীদ ও আহত পরিবার বর্গ, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী, অ্যাক্টিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম, বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে এই আলোচনাসভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

    কাজী রাব্বীউল হাসান মোনেম জয়পুরহাট-২ আসনের (ক্ষেতলাল, কালাই ও আক্কেলপুর) জাসদের সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর জেলা জাতীয়পার্টির যুগ্ম আহ্বায়কের পদে ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে কোনো পদে তার নাম নেই বলে দাবি করেন তিনি।

    এদিকে আওয়ামী লীগের ওই নেতার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক হাসিবুল হক সানজিদ একটি পোস্ট দিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি দুটি ছবি দিয়েছেন। একটি ছবিতে সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেটসহ আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে রাব্বীউল হাসান মোনেম রয়েছে। অন্য ছবিটি সোমবারে শহরের স্বপ্নছায়া কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির ইফতার ও দোয়া মাহফিলে রাব্বীউল হাসান বক্তব্য দিচ্ছেন।

    দুটি ছবিযুক্ত ফেসবুক পোস্টে হাসিবুল হক সানজিদ লিখেছেন, ‘জয়পুরহাটে জাতীয় নাগরিক পার্টির স্বঘোষিত সংগঠকদের দাওয়াতে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য, জাসদের সাবেক সদস্য রাব্বিউল হাসান মোনেম। জাতীয় নাগরিক পার্টি জয়পুরহাট জেলা শাখার ইফতার মাহফিলে নাগরিক পার্টিকে সমর্থন দিয়ে বক্তব্য দেন।’

    তিনি আরও লিখেছেন, ‘এস এম সাইফ মোস্তাফিজ ভাই আপনাকে বারবার বলার পরেও কোনো পদক্ষেপ নিলেন না। একটি কুচক্রী মহল যে এই নাগরিক পার্টির নাম খারাপ করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেছে এটা কি আপনাদের চোখে পড়বে না?। আশা করি সদুত্তর পাব। জয়পুরহাটের বুকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দিব না ইনশাল্লাহ ‘

    জান-ই আলম অপু নামে একজন লিখেছেন, ‘এবার তো সহ্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছ।’ জুয়েল মন্ডল নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আওয়ামী দোসরদের শক্ত হাতে দমন করা জরুরি।’

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক হাসিবুল হক সানজিদ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, রাব্বিউল হাসান মোনেম আওয়ামী লীগের নেতা। জাতীয় নাগরিক পার্টির ইফতার মাহফিলে তাকে দাওয়াত করে আনা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসন করতে ছাত্র-জনতা রক্ত দেননি। এটা সাংঘর্ষিক।

    এ বিষয়ে অ্যাড. কাজী রাব্বিউল হাসান মোনেম বুধবার (২৬ মার্চ) রাতে কালবেলাকে বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ইফতার দাওয়াতে গিয়েছিলাম। শুভেচ্ছা জানিয়েছে নতুন দলকে। এসময় তিনি নতুন দলে যোগ দেওয়ার কথা নাকচ করে দেন। এছাড়াও তিনি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো পদে নেই বলে দাবি করেন।

    জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা সংগঠক ওমর আলী বাবু বলেন, বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে কাজী রাব্বিউল হাসান মোনেমকে দাওয়াত করা হয়েছিল। তিনি আমাদের ইফতার মাহফিলে এসেছিলেন। বক্তব্যও দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কমিটিতে কাজী রাব্বিউল হাসান মোনেমের নাম নেই। এটা নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে।



    Previous Post Next Post